এখনও হাতের ইশারায় চলে চট্টগ্রাম নগরীর ট্রাফিক ব্যবস্থা

Jahangir Alam babu    |    ১১:৩৮ এএম, ২০২০-০৯-০৩


এখনও হাতের ইশারায় চলে চট্টগ্রাম নগরীর ট্রাফিক ব্যবস্থা

জাহাঙ্গীর আলম বাবু: তৎকালীন এরশাদ সরকারের আমলে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন এলাকায় ৩৯টি মোড়ে সিগন্যাল বাতি স্থাপন করে। একই সরকারের আমলে পরে আরও পাঁচটি মোড়ে নতুন করে সিগন্যাল বাতি স্থাপন করা হয়। ১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড়ে কিছু সিগন্যাল বাতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কিন্তু জোড়াতালি দিয়ে ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত একটানা কয়েক বছর চট্টগ্রাম নগর পুলিশ ট্রাফিক ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করে আসছিল। ওই সময় কোনো বাতির কারিগরি ত্রুটি দেখা দিলে পুলিশ সিটি করপোরেশনকে জানাত। সিটি করপোরেশন তা মেরামত করে দিত।

এদিকে বর্তমান সরকারের আমলে নগরের উন্নয়ন কার্যক্রম শুরু হয়। অর্থাৎ বিভিন্ন সেবামূলক সংস্থার সড়ক খোঁড়াখুঁড়ির কারণে ২০১২ সালে ২১টি মোড়ের সিগন্যাল বাতি পুরোপুরি অকার্যকর হয়ে পড়ে। বাকি ২৫টি মোড়ের বাতিগুলো রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়। এতে ওই সময় খরচ হয় দেড় কোটি টাকা। ২৫টি মোড়ের মধ্যে ১০টিতে ১৫ ওয়াটের এলইডি এবং ১৫টিতে ৫০ থেকে ১০০ ওয়াটের হ্যালোজেন বাতি লাগানো হয়েছিল। সেই বাতিগুলোও এখন পুরোপুরি অকার্যকর। এ অবস্থায় নগরের ট্রাফিক পুলিশ আবার নতুন করে সিগন্যাল বাতির ব্যবহার শুরু করেছে। সিটি করপোরেশন এতে সহযোগিতা করছে।

ট্রাফিক পুলিশ সূত্র বলছে, সাত–আট বছর ধরে হাতের ইশারায় ট্রাফিক কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে আসছিল। নগরের বড় জংশনগুলোতে ট্রাফিক পুলিশকে হিমশিম খেতে হয়েছে। সিগন্যাল বাতি দিয়ে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম শুরু হলে জনবলও কম লাগবে।

দীর্ঘ ২২ বছর বন্ধ থাকার পর গতবছরের শেষের দিকে চট্টগ্রামে আবারও শুরু হয়েছিল সিগন্যাল বাতির মাধ্যমে যানবাহন নিয়ন্ত্রণ। স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতির পরিবর্তে স্পটভিত্তিক কন্ট্রোল বোর্ড বসিয়ে করা হচ্ছে সিগন্যাল বাতির ব্যবহার। ফলে যানবাহনের চাপ দেখে সে অনুসারে যানচলাচল নিয়ন্ত্রণ করতেন ট্রাফিক সদস্যরা। চট্টগ্রাম নগরীর টাইগারপাস মোড় থেকে শুরু করে চৌমুহনী, আগ্রাবাদ, বারেক বিল্ডিং, ওয়াসাসহ বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে পাইলট প্রকল্প হিসেবে চালু করা হয়েছে এ প্রকল্পটি। তবে করোনার কারনে বর্তমানে বন্ধ রাখা হয়েছে সব কয়টি সিগন্যাল বাতি প্যাসেঞ্জার ভয়েসকে এমনটাই জানিয়েছে নগর ট্রাফিক বন্দর বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার তারেক আহম্মেদ।

বর্তমান সময়ে সব কিছুতেই আধুনিকতার ছোঁয়া লাগছে। তাই নগর ট্রাফিক পুলিশের চেষ্টা ছিল কীভাবে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে আধুনিকতা আনা যায়। ট্রাফিক বিভাগ নিজেদের প্রচেষ্টায় চট্টগ্রামের ৪৪ টি স্পটের মধ্যে ১০টি স্পট অটোমেটিক ট্রাফিক সিগন্যাল লাইটের আওতায় এনেছিল। পর্যায়ক্রমে চট্টগ্রাম শহরকে সিগন্যাল লাইটের আওতায় আনা হবে এমনটাই আশা করেন নগরীর ট্রাফিক সদস্যরা। জনসাধারণ ও চালকদের মাঝে ট্রাফিক সিগন্যাল লাইটের সচেতনতা বৃদ্ধি পেয়েছে। এখন বেশির ভাগ মানুষ ট্রাফিক সিগন্যাল মানছেন।

ট্রাফিক বন্দর বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার তারেক আহমেদ প্যাসেঞ্জার ভয়েসকে বলেন, নগরীর যে ১০টি স্পট অটোমেটিক ট্রাফিক সিগন্যাল লাইটের আওতায় আনা হয়েছিল সেগুলো করোনার কারনে বন্ধ রাখা হয়েছে। খুব শীগ্রই আবারও চালু করা হবে। তিনি আরো বলেন আমরা সব কয়টি স্পটে অটোমেটিক ট্রাফিক সিগন্যাল লাইট বসানোর বিষয়ে সিটি কর্পোরেশনকে জানিয়েছি। এইটি চালু হলে ট্রাফিকে জনবল কম লাগবে কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, শুধুমাত্র সিগন্যাল লাইট দিয়ে সড়কে শৃঙ্খলা সম্ভব না। কারনে আমাদের মূল সড়কের কোন বিকল্প সড়ক নেই। যার ফলে একই রুটে সব ধরনের যানবাহন চলাচল করে, ফলে সিগন্যাল লাইট এবং হাতের ইশারা দুইটি ব্যবহার করতে হবে। তবে জনগণ সচেতন হয়ে গেলে তখন কিছুটা পরিবর্তন হবে।

গণপরিবহন বিশেষজ্ঞরা কার্যকরভাবে সিগন্যাল বাতি চালুর পরামর্শ দিয়েছেন। ট্রাফিক পুলিশের এ কার্যক্রমে কিছুটা শৃঙ্খলা আসতে পারে বলে তাঁরা মনে করছেন। তবে পুরোপুরি সুফল পেতে বিশেষজ্ঞদের সম্পৃক্ত করে গোটা নগরে সিগন্যাল বাতি চালুর পরামর্শ দেন প্রকৌশলী সুভাষ চন্দ্র বড়ুয়া।

হাতের ইশারা থেকে সিগন্যাল বাতি ব্যবস্থাপনায় ফিরিয়ে যাওয়া ক্ষত জায়গায় মলম লাগানোর মতো বলে মনে করছেন গণপরিবহন বিশেষজ্ঞ এই প্রকৌশলী। তিনি আরো বলেন, নগরে গাড়ির সংখ্যা বেড়ে গেছে। একটি মোড় বা জংশনে কতটি গাড়ি প্রতি মিনিটে পারপার হয়, তার ডিজাইন তৈরি করতে হবে। ডিজাইন না করে সিগন্যাল বাতিতে ফিরে গেলে উদ্দেশ্য পুরোপুরি সফল হবে না। অর্থাৎ একটি জংশনে চার–পাঁচ দিক থেকে গাড়ি পারাপার হয়। উত্তর বা দক্ষিণমুখী গাড়ি পারপার করলে পূর্ব ও পশ্চিমমুখী গাড়ির জট লেগে যাচ্ছে কি না, তা ডিজাইন করে বের করতে হবে। তবে সিগন্যাল–ব্যবস্থায় ফিরে যাওয়ায় কিছুটা সুফল আসতে পারে।